এনজিও লোন

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন ২০২৫ (আপডেট তথ্য)

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন সম্পর্কে জানেন কী? বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই ক্ষেত্রে আম্বালা ফাউন্ডেশন একটি বিশ্বস্ত নাম হিসেবে উঠে এসেছে বিগত কয়েক বছরে। গত ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই অলাভজনক সংস্থাটি মাইক্রোফাইন্যান্সের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে ও তাদোর আর্থিকভাবে সচ্ছল করেছে।

আজকের এই আর্টিকেলে আজ আমরা আম্বালা ফাউন্ডেশনের লোন প্রোগ্রামগুলো নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করব। এই আর্টিকেল রয়েছে আম্বালা ফাউন্ডেশন লোনের ধরন, যোগ্যতা, সুবিধা-অসুবিধা, পরিশোধের নিয়ম ও যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য। যদি আপনি আর্থিক সহায়তা খুঁজছেন বা ছোট ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করছেন।  তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য একটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে।

আম্বালা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য

আম্বালা ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। যা দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি  সামাজিক উন্নয়নকে মূল লক্ষ্য করে গড়ে উঠেছে। এটি মাইক্রোফাইন্যান্স রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) দ্বারা স্বীকৃত ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় কাজ করে। সংস্থাটির মিশন হলো দরিদ্রদের জীবনযাত্রা উন্নত করা, পরিবেশ সুরক্ষা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে অবদান রাখা। বর্তমানে আম্বালা ফাউন্ডেশন ১১টি জেলায় ১০৬টি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আম্বালা ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে। আম্বালা ফাউন্ডেশন সংস্থাটি ইতিমধ্যে ২০ লক্ষের বেশি মানুষকে সরাসরি উপকৃত করেছে। যা আম্বালা ফাউন্ডেশন কার্যকারিতার প্রমাণ বহন করে।

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন কী

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন মূলত ক্ষুদ্রঋণ প্রোগ্রাম। যা বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের ব্যক্তি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং বিশেষ করে নারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই লোনের মাধ্যমে ছোট ব্যবসা শুরু, কৃষি কাজ, শিক্ষা খরচ বা জরুরি প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়। আম্বালা ফাউন্ডেশন সংস্থাটি ২০০২ সাল থেকে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রাম চালু করেছে এবং পিকেএসএফের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এটিকে শক্তিশালী করেছে। এই লোন গ্রাহকদের দারিদ্র্যের চক্র ভাঙতে সাহায্য করে। কারণ এতে কম সুদ ও সহজ শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে ব্যাংক লোন পাওয়া কঠিন সেখানে আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন একটি বিকল্প হিসেবে উঠে আসে। যা গ্রাহকদের আত্মনির্ভরতা প্রচার করে থাকে। 

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোনের বিভিন্ন প্রকার

আম্বালা ফাউন্ডেশন বিভিন্ন চাহিদা অনুসারে গ্রাহকদের লোন প্রোগ্রাম অফার করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • বুনিয়াদ (অতি দরিদ্রদের জন্য): অতি দরিদ্র, ভিক্ষুক ও কঠিন অবস্থায় থাকা মানুষদের জন্য। উদ্দেশ্য: স্থায়ী আয়ের সুযোগ তৈরি ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি।
  • জাগরণ (গ্রামীণ ও শহুরে মানুষের জন্য): ছোট ব্যবসা, অফ-ফার্ম কার্যক্রম ও পরিবারভিত্তিক আয়ের জন্য। এটি গৃহভিত্তিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করে।
  • আগ্রোশর (উদ্যোক্তাদের জন্য): ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য উৎপাদনমুখী কাজ। এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে ও জীবনযাত্রা উন্নত করে।
  • সুফলন (কৃষি প্রোগ্রাম): কৃষকদের জন্য ফসল চাষ, পশুপালন, মৎস্যচাষ ইত্যাদি। উদ্দেশ্য: উৎপাদন বাড়ানো ও দারিদ্র্য হ্রাস।
  • সাহস (দুর্যোগপীড়িতদের জন্য): দুর্যোগের পর পুনর্বাসন, ঘর মেরামত ও আয়ের সুযোগ পুনরুদ্ধারের জন্য।
  • হাউজিং লোন: ঘর নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য।
  • স্যানিটেশন লোন: স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন নির্মাণের জন্য ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা। সর্বোচ্চ ১৮ মাস মেয়াদে এই লোন প্রদান করা হয়৷ 

এই লোনগুলো বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে ও সংস্থাটির মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রামের অংশ।

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোনের পরিমাণ এবং সুদের হার

লোনের পরিমাণ সাধারণত ৫,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। যা লোনের ধরন ও আবেদনকারীর যোগ্যতার উপর নির্ভর করে। প্রথমবার ছোট পরিমাণ দেওয়া হয় ও পরবর্তীতে সফল পরিশোধের পর বড় লোন পাওয়া যায়। সুদের হার ১২% থেকে ১৫% এর মধ্যে থাকে।  যা বাংলাদেশ ব্যাংক ও এমআরএ-এর নির্দেশনা অনুসারে নির্ধারিত। এটি সরল সুদ হিসাবে গণনা হয় ও লোনের ধরন অনুসারে পরিবর্তনশীল। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি লোনের সুদ কম হতে পারে। এই লোনে কোনো প্রসেসিং ফি নেই। যা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে।

আম্বালা ফাউন্ডেশন যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

অনান্য এনজিও এর মতো আম্বালা ফাউন্ডেশন থেকে লোন নেওয়ার জন্য গ্রাহকদের বেশ কিছু যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন পেতে নিম্নলিখিত যোগ্যতা পূরণ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করতে হয় করতে হয়:

  • বয়স: ১৮ থেকে ৬০ বছর।
  • নাগরিকত্ব: বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক।
  • আয়: নিয়মিত আয়ের উৎস বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা।
  • গ্রুপ সদস্যতা: কিছু লোনে সঞ্চয় গ্রুপে (সভায়) যোগদান বাধ্যতামূলক।
  • ক্রেডিট ইতিহাস: অন্য প্রতিষ্ঠানে খেলাপি লোন না থাকা।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি প্রয়োজন হয়ে থাকে।
  • ২টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সদ্য তোলা রঙিন ছবি) হতে হবে।
  • আয়ের প্রমাণ প্রয়োজন হবে (ব্যবসায়িক প্ল্যান বা স্যালারি সার্টিফিকেট)।
  • ঠিকানার প্রমাণ (ইউটিলিটি বিল- পানি বিল,বিদ্যুৎ বিল)।

সাধারণত আম্বালা ফাউন্ডেশন থেকে লোন পেতে সর্বনিম্ন ৭ কর্মদিবস থেকে ১৫ কর্মদিবস প্রয়োজন হয়ে থাকে। 

লোন পরিশোধের নিয়ম ও  ডিজিটাল সুবিধা

আম্বালা ফাউন্ডেশনের লোন পরিশোধ সহজ ও নমনীয়। সাপ্তাহিক, মাসিক বা ত্রৈমাসিক কিস্তি আকারে লোন পরিশোধ করা যায়। লোন পরিশোধ করার জন্য গ্রাহক মেয়াদ ৬ মাস থেকে ৩ বছর পেয়ে থাকেন। বিকাশের মাধ্যমে নিয়মিত পরিশোধ সম্ভব। যা যেকোনো সময় ওস্থান থেকে করা যায়। ধাপগুলো:

  1. বিকাশ অ্যাপ খুলুন।
  2. মাইক্রোফাইন্যান্স অপশন চয়ন করুন।
  3. আম্বালা ফাউন্ডেশন নির্বাচন করুন।
  4. সদস্য নম্বর দিন।
  5. কিস্তির পরিমাণ প্রদান করে নিশ্চিত করুন।

এটি ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের অংশ হিসেবে কাজ করে আম্বালা ফাউন্ডেশনের জন্য। 

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোনের সুবিধাসমূহ

আম্বালা ফাউন্ডেশনের লোনের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যা উক্ত লোনকে অন্যান্য এনজিও থেকে পৃথক করে তুলেছে:

  • নিম্ন-আয়ের জন্য কম শর্তে লোন পাওয়া যায়।
  • সহজ ও নমনীয় গ্রাহকের জীবনযাত্রা অনুসারে।
  • নারী ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম নারীদের জন্য এই লোন দেওয়া হয় 
  • ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে লোন পরিশোধ করা যায়। বিকাশের মাধ্যমে লোন পরিশোধ করা যায়৷ 
  • সামাজিক সেবা সুবিধা রয়েছে। যেমন: লোনের সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহায়তা।
  • কোনো জামানতের প্রয়োজন হয় না। গ্রুপ ভিত্তিতে বিশ্বাস করে লোন প্রদান করা হয়। 

এই সকল সুবিধা গ্রাহকদের দারিদ্র্য হ্রাসে সাহায্য করে থাকে। 

অসুবিধাসমূহ এবং সতর্কতা

আম্বালা ফাউন্ডেশন এর যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধা থাকতে পারে গ্রাহকের উপর নির্ভর করে:

  • সীমিত কভারেজ রয়েছে অর্থাৎ শুধু নির্দিষ্ট জেলায় তাদের সেবা পাওয়া যায় 
  • গ্রুপ বাধ্যতা রয়েছে কিছু লোনে গ্রুপ যোগদান দরকার। অনেকে সবায় যোগ দিতে চান না৷ 
  • সুদের হার ব্যাংকের চেয়ে সামান্য বেশি হতে পারে তবে যুক্তিসঙ্গত সুদের হার।

সতর্কতা: লোন নেওয়ার আগে আপনার লোন  পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করুন ও সঠিক কাগজ দিন এবং অফিসিয়াল শাখায় যোগাযোগ করুন।

তুলনামূলক ছক

বিষয় আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন ব্যাংক লোন অন্যান্য এনজিও লোন
সুদের হার ১২-১৫% ৮-১২% ১০-২০%
লোনের পরিমাণ ৫,০০০-৫,০০,০০০ টাকা ৫০,০০০+ টাকা ৫,০০০-১,০০,০০০ টাকা
পরিশোধের সময় ৬ মাস-৩ বছর ১-৫ বছর ৬ মাস-২ বছর
যোগ্যতা নিম্ন-আয়, গ্রুপ উচ্চ আয়, জামানত নিম্ন-আয়, গ্রুপ
প্রক্রিয়াকরণ সময় ১-২ সপ্তাহ ২-৪ সপ্তাহ ১-২ সপ্তাহ

বাস্তব উদাহরণ: সফলতার গল্প

কুমিল্লার এক গৃহিণী রিনা বেগম আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন নিয়ে একটি ছোট মুদির দোকান শুরু করেন। ৫০,০০০ টাকার জাগরণ লোন নিয়ে তিনি সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করছেন। এখন তার মাসিক আয় ১৫,০০০ টাকা এবং সংস্থাটির শ্বপ্নযাত্রা প্রকল্পের মাধ্যমে তার মেয়ের শিক্ষা খরচও মেটানো হচ্ছে। এমন অনেক গল্প রয়েছে যেমন পোলট্রি ফার্ম বা গরু পালন যা জীবন বদলে দিয়েছে।

আরও জানতে পারেনঃ পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন লোন 

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন কারা পেতে পারেন?

যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক, যার বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এবং নিয়মিত আয়ের উৎস বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা রয়েছে, তারা এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। গ্রুপ সদস্যতা কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হতে পারে।

লোন পেতে কত সময় লাগে?

সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই সাপেক্ষে ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে লোন প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয়।

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোনের সুদের হার কত?

সুদের হার লোনের ধরনের উপর নির্ভর করে ১২% থেকে ১৫% এর মধ্যে থাকে, যা সরল সুদ হিসেবে গণনা করা হয়। সঠিক হার জানতে নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন।

লোনের কিস্তি কীভাবে পরিশোধ করা যায়?

কিস্তি সাপ্তাহিক, মাসিক বা ত্রৈমাসিকভাবে পরিশোধ করা যায়। বিকাশের মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা রয়েছে, যা যেকোনো সময় ও স্থান থেকে করা সম্ভব।

যোগাযোগের তথ্য

  • প্রধান কার্যালয়: হাউস-৬২, ব্লক-কেএ, পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭।
  • ফোন: +৮৮০২ ২২২২৪২৫৬১, +৮৮০২ ৪৮১১৩১৬০।
  • ওয়েবসাইট: https://ambalafoundation.org/
  • ফেসবুক: আম্বালা ফাউন্ডেশন

শেষ কথা

আম্বালা ফাউন্ডেশন লোন শুধু আর্থিক সাহায্য নয় বরং আত্মনির্ভরতার একটি দরজা। এটি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে লোন নেওয়ার আগে আপনার সক্ষমতা বিবেচনা করুন। যদি আপনি ছোট উদ্যোগ শুরু করতে চান তাহলে আজই যোগাযোগ করুন। এই আর্টিকেল সম্পর্কে যদি আপনার মতামত থাকে তাহলে কমেনৃট করে জানাবেন। আমরা দ্রুত প্রশ্নের মতামত জানাবো 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button