এনজিও লোন

আশা এনজিও লোন পদ্ধতি ২০২৫ (আপডেট তথ্য)

আশা এনজিও লোন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা অপরিসীম আশা এনজিও এর।  যদি আপনি গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আশা এনজিওর লোন সেবা আপনার জন্য উপযোগী হতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা আশা এনজিও লোন পদ্ধতি জানানোর পাশাপাশি লোনের ধরন, আবেদন প্রক্রিয়া, সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

আশা এনজিওর সংক্ষিপ্ত তথ্য

আশা এনজিও মূলত অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট নামে পরিচিত। ১৯৭৮ সালে মো. শফিকুল হক চৌধুরী দ্বারা প্রতিষ্ঠিতা লাভ করে।  প্রথমে এটি সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উপর ফোকাস করেছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালে এটি শুধুমাত্র মাইক্রোক্রেডিটে মনোনিবেশ করে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে। এর ফলে আশা এনজিও আজকের মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে ও এটি দারিদ্র্য নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সংস্থাটি গ্রামীণ দরিদ্রদের সংগঠিত করে। তাদের মধ্যে সলিডারিটি তৈরি করে ও  আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। বিশেষ করে নারীদের ৭১% সেবা প্রদান করা হয়। যা সমাজে লিঙ্গ সমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

আশা এনজিও লোন কী? 

আশা এনজিও লোন হলো একটি ক্ষুদ্রঋণ সেবা। যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জন্য তৈরি করা হয়েছে। আশা এনজিও এর মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র মানুষদের ব্যবসা, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, অথবা বাড়ি তৈরির জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করা। এই আশা এনজিও এর লোন সাধারণত জামানতবিহীন হয়ে থাকে। যা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলেছে।  আশা এনজিও লোন পদ্ধতি গ্রাহকদের সহজে ঋণ প্রাপ্তি ও কিস্তিতে পরিশোধের সুবিধা দেয়। 

আশা এনজিও লোন পদ্ধতির ধাপসমূহ

আশা এনজিও লোন পদ্ধতি সহজ ও গ্রাহকবান্ধব। নিচে ধাপগুলো সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে:

  • আবেদন: মাঠকর্মীর সাথে যোগাযোগ করুন ও নিকটস্থ শাখায় গিয়ে ফর্ম পূরণ করুন। যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য, আয়ের বিবরন ও লোনের উদ্দেশ্য উল্লেখ করতে হবে।
  • তথ্য যাচাই: আপনার তথ্যের উপর ভিত্তি করে আশা এনজিও আপনার ঠিকানা, আয়ের উৎস ও পরিশোধ ক্ষমতা যাচাই করবে।
  • গ্রুপ তৈরি: গ্রামীণ এলাকায় ছোট সভা গঠন করা হয়। এই সভায় সদস্যরা একে অপরের জন্য দায়বদ্ধ। সভার সদস্য হতে হবে অবশ্যই। 
  • অনুমোদন: ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে লোন অনুমোদিত হয়।
  • বিতরণ: টাকা গ্রাহকের সরাসরি হাতে প্রদান করা হয়।

এই আশা এনজিও লোন পদ্ধতি দ্রুত  স্বচ্ছ।  যা গ্রাহকদের সময় বাঁচায়।

আশা এনজিও লোনের প্রকারভেদ

আশা এনজিও বিভিন্ন চাহিদা অনুসারে লোন প্রদান করে। যেমন:

লোনের ধরন উদ্দেশ্য পরিমাণ (BDT) সময়সীমা সুদের হার (%)
ক্ষুদ্রঋণ ছোট ব্যবসা, কৃষি ৫,০০০ – ৫০,০০০ ৬-১২ মাস ১০-১৫
মাঝারি ঋণ মাঝারি উদ্যোগ ৫০,০০০ – ১,০০,০০০ ১-২ বছর ১০-১৫
শিক্ষা ঋণ শিক্ষা খরচ ১০,০০০ – ৫০,০০০ ১-৩ বছর ১০-১৫
স্বাস্থ্য ঋণ চিকিৎসা ৫,০০০ – ৩০,০০০ ৬-১৮ মাস ১০-১৫
জরুরি ঋণ হঠাৎ সংকট ৫,০০০ – ২০,০০০ ৩-৬ মাস ১০-১৫

এই প্রকারভেদগুলো আশা এনজিও লোন পদ্ধতিকে আরো সুদূঢ় করে তুলেছে ।

লোন পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আশা এনজিও লোন পদ্ধতিতে কাগজপত্র সহজ। যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তার মধ্যে রয়েছে:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম সনদ।
  • ঠিকানার প্রমাণ প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ বিল)। 
  • ২-৩টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • আয়ের প্রমাণ প্রদান করতে হয়। সাধারণত দায়িত্বরত কর্মকর্তা ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে লোন প্রদান করে থাকেন। 

এই সকল কাগজপত্র  সঠিকভাবে জমা দিলে খুব সহজেই ও খুব তাড়াতাড়ি লোন পাওয়া যায়।  লোন ফর্ম নিকটস্থ শাখা থেকে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। ফর্মে নাম, ঠিকানা, বয়স, লোনের পরিমাণ, উদ্দেশ্য ও আয়ের বিবরণ প্রদান করতে হয়।  আশা এনজিও লোন পদ্ধতি অনুসারে ফর্ম জমা দেয়ার পর যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকে

লোনের কিস্তি পরিশোধ পদ্ধতি

আশা এনজিও লোন কিস্তি সাপ্তাহিক বা মাসিক হয়। ক্ষুদ্রঋণে ৬-১২ মাস ও মাঝারিতে ১-২ বছর। কিস্তির পরিমাণ লোনের পরিমাণ, সুদ ও সময়ের উপর নির্ভর করে। আশা এনজিও লোন পদ্ধতি নমনীয়। যাতে গ্রাহকরা আয়ের সাথে মিলিয়ে পরিশোধ করতে পারে। এক্ষেত্রে গ্রাহকেরা লোন পরিশোধ করার জন্য লম্বা সময় পেয়ে থাকেন। 

আশা এনজিও সুদের হার

২০২৫ সালে আশা এনজিও লোনের সুদের হার ১০-১৫% বার্ষিক। যা লোনের ধরন, লোনের পরিমাণ ও সময়ের উপর নির্ভর করে। এটি বাজারে প্রতিযোগিতামূলক ও বিশেষ প্রোগ্রামে কম হতে পারে। গ্রাহকদের লোন নেয়ার আগে সুদের হার জেনে নেয়া উচিত। আশা এনজিও লোন পদ্ধতি সুদের হারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

লোন পাওয়ার যোগ্যতা

প্রতিটি এনজিও এর মতো আসেন জায়গা থেকে লোন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু যোগ্যতা থাকা অবাশ্যক। এ সকল যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে,:

  • আবেদনকারীর নূন্যতম ১৮ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • স্থায়ী ঠিকানার বাসিন্দা হতে হবে। 
  • স্থিতিশীল আয়ের উৎস থাকতে হবে 
  • গ্রুপ সদস্যতা (গ্রামীণ ক্ষেত্রে) থাকতে হবে। 
  • কিছু ক্ষেত্রে বিবাহিত হওয়া প্রয়োজন। 

আশা এনজিও লোন পদ্ধতি সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ সকল যোগ্যতা থাকলে একজন গ্রাহক আশা এনজিও থেকে লোন করতে পারবেন। 

আশা এনজিও লোনের সুবিধা

প্রতিটি এনজিওর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যার কারণে এনজিও গুলির জনপ্রিয়তা পায়। আশা এনজিও এর ব্যতিক্রম নয়। আশা এনজিওর কয়েকটি সুবিধার মধ্যে রয়েছে:

  • জামানতবিহীন লোন পাওয়া যায়। 
  • দ্রুত অনুমোদন হয়ে থাকে। 
  • নমনীয় কিস্তির মাধ্যমিক লোন পরিশোধ করা যায়। 
  • বিভিন্ন ধরনের লোন রয়েছে যা গ্রাহকের চাহিদার উপর নির্ভর করে। 
  • গ্রামীণ উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়ন আশা এনজিওর প্রধান লক্ষ্য। 

আশা এনজিও লোন পদ্ধতি গ্রাহকের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনে ও কর্মক্ষম করে তোলে। 

লোন নেয়ার সতর্কতা

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা ভেবে থাকেন লোন নিয়ে পরবর্তীতে পরিশোধ করা খুব সহজ। প্রকৃতপক্ষে লোন নেওয়ার পূর্ব কয়েকটি বিষয়ে নাজু রাখা উচিত।যেমন:

  • সুদের হার জেনে নিন লোন নেওয়ার আগেই। 
  • লোন পরিশোধ ক্ষমতা আছে কিনা তা যাচাই করুন।
  • শর্তাবলী পড়ুন ও বুজে নিন লোনটি আপনার জন্য কিনা। 
  • ভাষা এনজিও নিবন্ধিত শাখা থেকে নিন।
  • অতিরিক্ত লোনের পরিমাণ এড়িয়ে চলুন।

আশা এনজিও লোন পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে উপকারী। কিন্তু লোন নেওয়ার সময় অসতর্কতা সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আরও জানতে পারেনঃ অনলাইনে ১০ হাজার টাকা লোন 

শেষ কথা

আশা এনজিও লোন পদ্ধতি বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আশা এনজিও দারিদ্র্য নিরসন, নারী ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করে। প্রত্যাশা করে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে আশা এনজিও লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছি। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনি নির্দ্বিধায় কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button