বুরো বাংলাদেশ শাখা কয়টি? সর্বশেষ তথ্য
আপনি যদি বুরো বাংলাদেশ শাখা কয়টি সম্পর্কে কোনো তথ্য না জেনে থাকেন, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ আজকের এই বিস্তারিত আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে বুরো বাংলাদেশের শাখা নেটওয়ার্ক, সংগঠনের ইতিহাস, সেবা, প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সহ সকল তথ্য জানাবো। তাহলে দেরি কেন, চলুন আলোচনা শুরু করা যাক। প্রথমে আমরা সংস্থা সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য জেনে নেব।
বুরো বাংলাদেশ কী? একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
বুরো বাংলাদেশ (BURO Bangladesh) হলো বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় অলাভজনক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও), যা মাইক্রোফাইন্যান্স এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা মূলত দরিদ্র নারীদের এবং দুর্বল গোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। সংস্থার নাম “BURO” এসেছে “Building United for Rural Orbanization”-এর সংক্ষিপ্ত রূপ থেকে, যা গ্রামীণ এবং শহুরে উন্নয়নের উপর জোর দেয়। বুরো বাংলাদেশের ভিশন হলো “A happy and prosperous self-reliant society through the overall development of the people of Bangladesh”। অর্থাৎ, বাংলাদেশের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্বাবলম্বী সমাজ গড়ে তোলা।
আরও জানতে পারেন: বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন পদ্ধতি ২০২৫ (আপডেট তথ্য)
মিশনের কথা বললে, সংস্থা টেকসই, কার্যকর এবং বাজার-সংবেদনশীল আর্থিক সেবা প্রদান করে । যাতে দরিদ্র গ্রাহকরা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। বুরো বাংলাদেশ প্রথম দিকে গ্রামীণ এলাকায় কাজ শুরু করলেও, এখন এটি দেশের ৬৪টি জেলা এবং ৪৮২টি উপজেলা কভার করে। ২০২৫ সালে তার ৩৫তম বর্ষপূর্ণ উদযাপন করেছে। যা ৩৫ বছরের উন্নয়ন যাত্রার স্মরণ করে। এই সময়ে সংস্থা শুধু মাইক্রোফাইন্যান্স নয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও মানসিক স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের ৯ অক্টোবর মেন্টাল হেলথ ডে-এর উপলক্ষে সংস্থা মানসিক স্বাস্থ্য ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছে। যা গ্রাহকদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে।
আরও জানতে পারেন: বুরো বাংলাদেশ দুর্যোগ ঋণ পদ্ধতি ২০২৫ (আপডেট তথ্য)
বুরো বাংলাদেশ শাখা কয়টি? সর্বশেষ তথ্য
বর্তমানে (২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর অনুসারে), বুরো বাংলাদেশের ১,৫০০টি শাখা রয়েছে দেশজুড়ে। এই বিশাল নেটওয়ার্ক ২.৯ মিলিয়নেরও বেশি গ্রাহককে সেবা প্রদান করে, যার মধ্যে ২.২১ মিলিয়ন সক্রিয় ঋণগ্রহীতা অন্তর্ভুক্ত। এটি ২০২৩ সালের ১,৩৭১টি শাখা থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, যা সংস্থার প্রসারের প্রমাণ। শাখাগুলো মূলত গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকায় অবস্থিত, যাতে দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষও সহজে অ্যাক্সেস পায়। এই শাখাগুলোর মাধ্যমে বার্ষিক ঋণ পোর্টফোলিও ১৩৮.৪ বিলিয়ন টাকা এবং সঞ্চয় পোর্টফোলিও ৫০.১ বিলিয়ন টাকা পরিচালনা হয়।
কেন এত শাখা? কারণ বুরো বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি শুধুমাত্র স্থানীয় উপস্থিতির মাধ্যমেই সম্ভব। প্রতিটি শাখা গ্রাহকদের ঋণ, সঞ্চয়, বীমা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে আয়োজিত বার্ষিক পরিকল্পনা মিটিং-এ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ২০২৫-২৬-এর জন্য নতুন কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে আরও শাখা যোগ হতে পারে।
বুরো বাংলাদেশের অফিসের প্রকারভেদ এবং কাঠামো
বুরো বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক শুধু শাখায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি স্তরবিন্যাসিত কাঠামোর উপর ভিত্তি করে। নিচে একটি টেবিলে প্রধান অফিসের প্রকারভেদ ও সংখ্যা দেওয়া হলো (২০২৫ সালের তথ্য অনুসারে):
অফিসের নাম | সংখ্যা | উদ্দেশ্য | বিশেষত্ব |
---|---|---|---|
শাখা অফিস | ১,৫০০ | স্থানীয় ঋণ, সঞ্চয় এবং সেবা প্রদান | গ্রাহক-কেন্দ্রিক, দৈনন্দিন লেনদেন; প্রতিটি শাখায় ১০-১৫ কর্মী |
এরিয়া অফিস | ৪০ | একাধিক শাখার তত্ত্বাবধান | আঞ্চলিক সমন্বয়, প্রশিক্ষণ এবং মনিটরিং; জেলা-স্তরীয় |
জোনাল অফিস | ৯ | এরিয়া অফিসগুলোর নিয়ন্ত্রণ | কৌশলগত পরিকল্পনা, আর্থিক রিপোর্টিং; বিভাগ-স্তরীয় |
ডিভিশনাল অফিস | ১০ | জোনাল অফিসগুলোর তত্ত্বাবধান | বিভাগীয় উন্নয়ন কর্মসূচি, নীতি বাস্তবায়ন; কেন্দ্রীয় সমন্বয় |
হেড অফিস | ১ | সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ এবং নীতি নির্ধারণ | ঢাকায় অবস্থিত, উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা |
এই কাঠামো সংস্থাকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, শাখা অফিসগুলো সরাসরি গ্রাহকের সাথে যুক্ত, যখন উচ্চতর অফিসগুলো কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া, সংস্থায় ১৫,০০-এরও বেশি কর্মচারী কাজ করেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা ও স্থানীয়। এই কর্মীরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ পান যাতে তারা গ্রাহকদের সেরা সেবা দিতে পারে।
আরও জানতে পারেন: বুরো বাংলাদেশ মৌসুমি ঋণ পদ্ধতি ২০২৫ (আপডেট তথ্য)
বুরো বাংলাদেশের ইতিহাস
বুরো বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে, যখন এটি ব্র্যাকের একটি প্রকল্প হিসেবে কাজ শুরু করে। প্রথমে এটি গ্রামীণ নারীদের ছোট ঋণ প্রদান করে, যা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৬ সালে এটি স্বাধীন সংস্থা হয়ে ওঠে এবং ২০০১ সালে বাণিজ্যিক মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন (MFI) হিসেবে রূপান্তরিত হয়। এই পরিবর্তন সংস্থাকে আর্থিকভাবে টেকসই করে তোলে।
২০০০-এর দশকে বুরো প্রসারিত হয় এবং ২০১০ সাল নাগাদ ৬০০টিরও বেশি শাখা গড়ে ওঠে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় সংস্থা গ্রাহকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ চালু করে, যেমন ঋণের মেয়াদ বাড়ানো এবং স্বাস্থ্য সহায়তা। ২০২০-২৪ অর্থবছরে এটি ২.৫ মিলিয়ন গ্রাহকের সেবা করে। ২০২৫ সালে ৩৫তম বর্ষপূর্তিতে সংস্থা তার অর্জনগুলো উদযাপন করে, যার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গ্রাহকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি। MicroSave Consulting-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বুরোর গ্রাহকরা চারটি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছে।
বুরো বাংলাদেশের সেবাসমূহ
বুরো বাংলাদেশ শুধু ঋণ প্রদান করে না; এটি একটি সম্পূর্ণ উন্নয়ন প্যাকেজ অফার করে। মূল সেবাগুলো হলো:
- মাইক্রোফাইন্যান্স ঋণ: ছোট ব্যবসা, কৃষি এবং ঘরোয়া প্রয়োজনের জন্য ৫,০০০ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ। মেয়াদ ৬-২৪ মাস, সুদের হার ২০-২৫%। গ্রুপ লেন্ডিং মডেল ব্যবহার করে, যাতে নারীরা একে অপরকে গ্যারান্টি দেয়।
- সঞ্চয় সেবা: নিয়মিত সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, যা গ্রাহকদের আর্থিক নিরাপত্তা দেয়। বার্ষিক ৪-৬% সুদ।
- স্বাস্থ্য সেবা: কমিউনিটি-ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি, যেমন প্রাথমিক চিকিত্সা, সচেতনতা ক্যাম্প এবং প্রশিক্ষণ। BURO Health Program-এর মাধ্যমে হাজারো মহিলা স্বাস্থ্যসেবা পান।
- শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ: গ্রাহকদের জন্য আর্থিক সাক্ষরতা, ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং জেন্ডার সমতা প্রশিক্ষণ। ২০২৫ সালে মেন্টাল হেলথ ওয়ার্কশপ চালু হয়েছে।
- জলবায়ু এবং টেকসই উন্নয়ন: কৃষি-সম্পর্কিত গ্রাহকদের জন্য জলবায়ু-সহনশীল ফসল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রোগ্রাম। MicroSave-এর সাথে সহযোগিতায় চারটি অঞ্চলে এটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
এই সেবাগুলো গ্রাহকদের জীবনকে বদলে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন গ্রামীণ মহিলা ঋণ নিয়ে ছাগলের খামার শুরু করে এবং তার পরিবারের আয় দ্বিগুণ করে।
আরও জানতে পারেন: বুরো বাংলাদেশ কৃষি ঋণ পদ্ধতি ২০২৫ (আপডেট তথ্য)
বুরো বাংলাদেশের প্রভাব: সংখ্যা এবং গল্প
বুরো বাংলাদেশের প্রভাব অপরিসীম। ৩৫ বছরে এটি ১০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে স্পর্শ করেছে। বর্তমানে ২.৯ মিলিয়ন গ্রাহকের মধ্যে ৯৫% মহিলা, যারা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। ঋণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে, এবং স্বাস্থ্য প্রোগ্রামে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে।
একটি প্রভাবশালী গল্প: বরিশালের রহিমা বেগম, যিনি ১৯৯৫ সালে প্রথম ঋণ নেন। আজ তিনি একটি সফল পোলট্রি ফার্মের মালিক এবং তার মেয়েরা স্কুলে পড়ে। এমন হাজারো গল্প বুরোর সাফল্যের প্রমাণ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক রিপোর্টে দেখা গেছে, সংস্থার পোর্টফোলিও ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু প্রোগ্রামে ৫০,০০০ গ্রাহক সুবিধা পেয়েছে।
বুরো বাংলাদেশের শাখার অবস্থান: কয়েকটি উদাহরণ
শাখাগুলো দেশের প্রায় সকল কোণে ছড়ানো। কয়েকটি প্রধান:
- ঢাকা: হেড অফিসসহ গুলশান-২ এবং মিরপুরে একাধিক শাখা।
- চট্টগ্রাম: আগ্রাবাদ এবং ফেনীতে শাখা, যা বন্দর-সম্পর্কিত ব্যবসায় সাহায্য করে।
- সিলেট: চৌহাট্টা এবং সুনামগঞ্জে, চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য।
- রাজশাহী: সিটি এলাকায়, কৃষি-ভিত্তিক ঋণের জন্য।
সম্পূর্ণ লিস্টের জন্য www.burobd.org দেখুন।
বুরো বাংলাদেশ হেড অফিস এবং যোগাযোগ
হেড অফিস: রূপা ট্রেড টাওয়ার (৪র্থ তলা), ১১৩ ধানমন্ডি এআরএ, ঢাকা-১২০৯। ফোন: +৮৮-০২-৯১১৯৯৫৫, ইমেইল: info@burobd.org। হেল্পলাইন: ১৬২৬৭।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং চ্যালেঞ্জ
২০২৫-২৬ অর্থবছরে বুরো ডিজিটাল সেবা প্রসারিত করবে, যেমন মোবাইল অ্যাপ-ভিত্তিক ঋণ আবেদন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যে আরও বিনিয়োগ। চ্যালেঞ্জ হলো মুদ্রাস্ফীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা, কিন্তু সংস্থা টেকসইতার উপর জোর দেয়।
শেষ কথা
বুরো বাংলাদেশ শাখা কয়টি? উত্তর ১,৫০০। এই শাখাগুলো শুধু অফিস নয় বরং উন্নয়নের প্রতীক। যদি আপনি সেবা নিতে চান তাহলে আপনি নিকটস্থ শাখায় যান। শর্তাবলী পড়ুন ও বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন। আরও তথ্যের জন্য অফিসিয়াল সাইট ভিজিট করুন। আপনার সফলতা কামনা!