বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন পদ্ধতি ২০২৫ (আপডেট তথ্য)
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন সম্পর্কে জানেন কী? বুরো বাংলাদেশ একটি জাতীয় পর্যায়ের অলাভজনক সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা। যা ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিতা লাভ করে এনজিওটির মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র ও গ্রামীণ জনগণকে আর্থিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদান করে স্বনির্ভর করে তোলা। বুরো বাংলাদেশ সংস্থাটি মাইক্রোফাইন্যান্স, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশন, কৃষি ও রেমিট্যান্সের মতো বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনমান উন্নত করছে। বিশেষ করে, বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন নামে পরিচিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ঋণ (SME) প্রোগ্রামটি প্রবাসীদের পরিবার সদস্যদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন কী?
বুরো বাংলাদেশ লোন নিয়ে অনেকের বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন হলো এমন একটি লোন যা গ্রাহক নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করে আয় বাড়াতে সাহায্য করে। এই লোনের মাধ্যমে সংস্থাটি প্রবাসীদের দেশে থাকা পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করে। ফলে প্রবাসী গ্রাহকের পরিবার তারা ব্যবসা বা উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত হতে পারে। বর্তমানে, বুরো বাংলাদেশ ২.৬ মিলিয়নের বেশি সক্রিয় গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। যার মধ্যে ১.৯ মিলিয়নের বেশি ঋণগ্রহীতা রয়েছে। এবার তবে বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন পদ্ধতি
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন পদ্ধতিটি মূলত কেন্দ্রভুক্ত ও কেন্দ্রবহির্ভূত দুটি পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। কেন্দ্রভুক্ত পদ্ধতিতে, সদস্যরা ছোট গ্রুপ বা কেন্দ্র গঠন করে নিয়মিত সভায় অংশগ্রহণ করে। যা সহায়তা এবং নিয়মিততা নিশ্চিত করে। এতে সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে, যা ঋণ পরিশোধের হার বাড়ায়। অন্যদিকে, কেন্দ্রবহির্ভূত পদ্ধতি আরও সহজ। এখানে ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করা যায় ও ব্যবসা বা কাজের জন্য ঋণ দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। কারণ তারা প্রায়শই ব্যস্ত থাকেন ও দ্রুত সেবা চান। উভয় পদ্ধতিতেই জামানত ছাড়া ঋণ প্রদান করা হয় যা দরিদ্র ও মধ্যবিওদের জন্য জন্য বড় সুবিধা। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথোরিটির নির্দেশনা অনুসরণ করে এই পদ্ধতিগুলো পরিচালিত হয়।
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন পদ্ধতির ধাপসমূহ
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন নেওয়ার পদ্ধতি বেশ সহজ ও কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিম্নে ধাপগুলো তালিকাভুক্ত করা হলো:
- সদস্যতা গ্রহণ: প্রথমে নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করে সদস্য হতে হবে। কেন্দ্রভুক্ত হলে কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে ও বহির্ভূত হলে সরাসরি আবেদন করতে হবে।
- সঞ্চয় শুরু: নিয়মিত সঞ্চয় জমা করে অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যা লোন পরিশোধ করার যোগ্যতা প্রমাণ করে।
- আবেদন জমা: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন ফর্ম পূরণ করে জমা দিন। প্রবাসী পরিবারের প্রমাণ দেখাতে হবে।
- যাচাই এবং অনুমোদন: সংস্থা আপনার সামর্থ্য, কাজের পরিকল্পনা ও যোগ্যতা যাচাই করবে। এতে ১-২ সপ্তাহ লাগতে পারে।
- ঋণ বিতরণ: অনুমোদন হলে ঋণের টাকা সরাসরি হস্তান্তর করা হয় হাতে।
- পর্যবেক্ষণ এবং সহায়তা: ঋণ ব্যবহারের পর সংস্থা প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে যা যে কোন গ্রাহকের উপকারে আসবে।
- পরিশোধ: নির্ধারিত কিস্তিতে ঋণ ফেরত দিন। সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তিতে লোব পরিশোধ করা যায়।
উপরোক্ত এই ধাপসমূহ অনুসরণ করে প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা সহজেই লোন পেতে পারেন।
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের শর্তাবলী
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের শর্তাবলী স্পষ্ট এবং ন্যায়সঙ্গত। ঋণগ্রহীতাকে অবশ্যই প্রতিশ্রুত কাজের জন্য নিজেকে ঋণ ব্যবহার করতে হবে। আর্থিক নিরাপত্তা তহবিলে নির্ধারিত হারে কিস্তি দিতে হবে। সংস্থার নিয়মে আস্থা রাখতে হবে ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। যেমন:সার্ভিস চার্জ কম। লোন গ্রহণ করার জন্য কোনো প্রকার প্রসেসিং ফি বা জামানত লাগে না। ঋণের মেয়াদ ১ থেকে ৩ বছর ও পরিশোধ না করলে পরবর্তী লোন পাওয়া কঠিন হয়। এই শর্তগুলো মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথোরিটির নির্দেশনা অনুসারে নির্ধারিত।
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের যোগ্যতা
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের যোগ্যতা নিম্নরূপ:
- কেন্দ্রভুক্ত সদস্যের জন্য:
- কেন্দ্রে যোগদানের বয়স কমপক্ষে ২ সপ্তাহ হতে হবে (শিথিলযোগ্য)।
- নিয়মিত সঞ্চয় জমার অভ্যাস।
- আর্থিক নিরাপত্তা তহবিলে অর্থ সঞ্চয়।
- কেন্দ্র সভায় উপস্থিতি।
- কর্মক্ষম হতে হবে অবশ্যই।
- প্রতিশ্রুত কাজে নিজেকে ও লোনের অর্থ ব্যবহার।
- সংস্থার নিয়মে আস্থা রাখা ও নিয়ম মেনে চলা।
- কেন্দ্রবহির্ভূত সদস্যের জন্য:
- সংস্থার নিয়মানুসারে সদস্য হতে হবে।
- দৃশ্যমান কাজ/ব্যবসার জন্য লোন নিতে হবে।
- আর্থিক নিরাপত্তা তহবিলে চাঁদা।
- প্রতিশ্রুত কাজে নিজেকে ব্যবহার করতে হবে।
- সংস্থার নিয়মে আস্থা থাকতে হবে।
- কর্মক্ষম হতে হবে অবশ্যই।
প্রবাসী পরিবারের সদস্য হলে সাধারণত অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়।
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন যা সাধারণ SME লোনের মতো:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) কপি।
- সাম্প্রতিক ছবি ( সদ্য তোলা পার্সপোর্ট সাইজের ছবি)।
- ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসার জন্য)।
- TIN সার্টিফিকেট।
- নেট ওয়ার্থ স্টেটমেন্ট।
- VAT সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য)।
- প্রবাসী পরিবারের প্রমাণ (যেমন রেমিট্যান্স রসিদ বা পরিবারের সদস্যের পাসপোর্ট কপি)।
- আবেদন ফর্ম (বাংলায় পূরণকৃত)।
এই কাগজপত্রগুলো জমা দিয়ে আবেদন করুন।
বুরো বাংলাদেশ থেকে কত টাকা লোন পাওয়া যায়?
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের পরিমাণ সদস্যের সামর্থ্য এবং সক্ষমতা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সাধারণত, ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়। তবে SME-এর জন্য আরো বেশি লোন বেশি সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ লোনে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রবাসী পরিবারের জন্য বিশেষ বিবেচনা করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে আরও সুবিধা। এই পরিমাণ নির্ধারণে আপনার আয়, ব্যবসা পরিকল্পনা ও পূর্ববর্তী ঋণ পরিশোধের ইতিহাস বিবেচনা করা হয়।
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন সুদের হার
সুদের হার বা সার্ভিস চার্জ ১০% থেকে ২৪% (ক্রমহ্রাসমান ভিত্তিতে), যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে নির্ধারিত। পার্বত্য অঞ্চলে এটি ১০%-১৭%। এই হার কমানোর জন্য কোনো অতিরিক্ত ফি নেই এবং এটি ঋণের অবশিষ্ট অংশের উপর গণনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১ লক্ষ টাকার লোনে প্রথম বছরের সুদ কমতে থাকে। তবে লোনের সুদের হার সাধারণত লোনের পরিমাণ ও লোন পরিশোধ করার সময়ের উপর নির্ভর করে।
বুরো বাংলাদেশ এনজিওর অন্যান্য কার্যক্রম
বুরো বাংলাদেশ শুধু লোন নয়, বিভিন্ন কার্যক্রম চালায়:
- স্বাস্থ্য: সম্প্রদায়ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
- পানি ও স্যানিটেশন (WaSH): নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা প্রদান করা
- কৃষি: কৃষকদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
- রেমিট্যান্স: প্রবাসীদের অর্থ প্রেরণ সেবা প্রদান করা
- শিক্ষা এবং ক্ষমতায়ন: নারী ও যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় সহায়তা প্রদান করা।
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোনের সুবিধা
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের সুবিধা অনেক:
- জামানত ছাড়া ঋণ।
- প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা।
- সহজ কিস্তি।
- প্রবাসী পরিবারের জন্য বিশেষ ফোকাস।
- স্বল্প সুদ এবং কোনো প্রসেসিং ফি।
- আয় বৃদ্ধি এবং স্বনির্ভরতা।
- সম্প্রদায়ভিত্তিক সহায়তা।
এসকল সুবিধা মধ্যবিও ও দরিদ্রদের জীবন পরিবর্তন করে।
এনজিওর শাখা
বুরো বাংলাদেশের ২৮২টি শাখা, ৩৭টি এরিয়া অফিস, ৯টি জোনাল অফিস এবং ১০টি ডিভিশনাল অফিস রয়েছে। এগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে আছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। যেমন: ঢাকা, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, কুষ্টিয়া ইত্যাদি জেলায় শাখা আছে। নিকটস্থ শাখা খুঁজতে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
এনজিওর যোগাযোগ ঠিকানা
হাউস নং: ১২/এ, ব্লক নং: CEN(F), রোড নং: ১০৪, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২।
ফোন: ৮৮-০২-৫৫০৫৯৮৬০, ৮৮-০২-৫৫০৫৯৮৬১, ৮৮-০২-৫৫০৫৯৮৬২।
ইমেল: buro@burobd.org।
লোনের কিস্তি ব্যবস্থা
সাধারণত কিস্তি সাপ্তাহিক বা মাসিক আকারে পরিশোধ করতে হয়।উদাহরণ:
মেয়াদ | কিস্তির ধরন | উদাহরণ (১ লক্ষ টাকা লোন) |
১ বছর | সাপ্তাহিক | প্রতি সপ্তাহে ২,০০০ টাকা (সুদ সহ) |
২ বছর | মাসিক | প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা (সুদ সহ) |
৩ বছর | সাপ্তাহিক/মাসিক | সহজ ও সামর্থ্য অনুসারে। |
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের প্রভাব
বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোনের প্রভাব বেশ ইতিবাচক। এই লোন ঋণগ্রহীতাদের আয় বাড়ায়, নারী ক্ষমতায়ন করে ও সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করে। পরিসংখ্যানের তথ্য অনুসারে, এমন লোনগুলো দারিদ্র্য কমায় ও ব্যবসা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা নতুন উদ্যোগ শুরু করে স্বনির্ভর হয়। সামগ্রিকভাবে, বুরো বাংলাদেশ প্রবাসী লোন গ্রাহকদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে।
বহুল আলোচিত প্রশ্নসমূহ
আমি একটা ঋণ নিতে চাই, কিভাবে নিবো?
নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন এবং যোগ্যতা পূরণ করুন।
সুদের হার কত?
১০% – ২৪% ক্রমহ্রাসমান।
প্রবাসী না হলে লোন পাবো?
হ্যাঁ, কিন্তু প্রবাসী পরিবারের জন্য বিশেষ সুবিধা।
কতদিনে লোন পাওয়া যায়?
১-২ সপ্তাহে।
শেষ কথা
প্রত্যাশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে বুরো বাংলাদেশ এনজিও এর প্রবাসী লোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছি । তবে আপনি যদি বুরো বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী লোন নিতে চান এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই বুরো বাংলাদেশ এর নিকটস্থ শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আপনি অবশ্যই নির্দ্বিধায় জানাতে পারেন কমেন্ট করে ।